logo
আপডেট : ১৯ জুলাই, ২০২২ ১৩:৪০
ফিরে আসছে লোডশেডিং
অনলাইন ডেস্ক

ফিরে আসছে লোডশেডিং

 

একসময় দেশে এতো বেশি লোডশেডিং ছিলো যে, বিদ্যুৎ যাওয়ার নয় আসার হিসাব রাখতো মানুষ। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের বিদ্যুৎখাতের এতো বেশি উন্নয়ন করেছে যে- মানুষ ভুলেই গিয়েছিলো একসময় ঘন ঘন বিদ্যুৎ যেত। অনেক বছর পর ফিরে আসছে সেই হারানো স্মৃতি। ফিরে আসছে লোডশেডিং।
মূলত জ্বালানি তেল সাশ্রয়ে বিদ্যুৎ রেশনিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিশ্বজুড়ে চলমান অর্থনৈতিক সংকটে দেশের রিজার্ভের ওপর অতিরিক্ত চাপ না দিতেই এমন সিদ্ধান্ত। মঙ্গলবার থেকেই দেশজুড়ে শুরু হবে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং। বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে সপ্তাহে একদিন এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের এই সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

এছাড়া ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সপ্তাহে একদিন বন্ধ থাকবে পেট্রোল পাম্প। রাত ৮টার পর দোকানপাট বন্ধ না করলে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। এছাড়া বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় অফিসের সময় কমিয়ে ৯টা থেকে ৩টা বা ৪টা পর্যন্ত করা হবে নাকি ওয়ার্ক ফ্রম হোম (বাসা থেকে অফিস) হবে, তা শিগগিরই জানানো হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন। সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

এদিকে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের আমদানি মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার রয়েসয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বিদ্যুতের যাওয়া-আসার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। কয়েক বছর ধরে সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের অভ্যাসের কারণে বিদ্যুতের যাওয়া-আসা মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে, সামাজিক মাধ্যমে অসন্তোষের কথা তুলেও ধরছেন হাজারো মানুষ।

সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য, বিশেষ করে এলএনজির দামে লাফ, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কয়লা সরবরাহে বিঘ্নের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে হয়েছে। পাওয়ার সেলের তথ্যানুযায়ী, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। সেই জায়গায় উৎপাদন হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত। জ্বালানি তেলের দাম বেশি বলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো যাচ্ছে না।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং কোভিড-পরবর্তী চাহিদা বাড়ায় আগামী কয়েক মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়তির দিকে থাকবে বলেই পূর্বাভাস আছে। গত এক যুগে বিদ্যুৎ খাতে নানা পদক্ষেপের পরও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতির কারণে লোডশেডিং ফিরে আসার পর অসন্তোষের মধ্যে গত ৫ জুলাই এই সংকটের কারণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ওইদিন সরকারপ্রধান বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, গ্যাসসহ বিদ্যুৎ তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে পরিবহন ব্যবস্থায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশেই বিদ্যুতের জন্য হাহাকার তৈরি হয়েছে।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে সোমবার সকালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক সমন্বয় সভায় বিদ্যুতের এই রেশনিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী জানান, এ সিদ্ধান্ত সাময়িক। বিশ্ব পরিস্থিতির উত্তরণ হলে আগের অবস্থানে ফিরে আসা হবে। ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থগিতের সিদ্ধান্তের কথাও জানান জ্বালানি উপদেষ্টা।

তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনকে কমিয়ে যাতে আমাদের খরচ কম হয়, যেটা সহনশীল হয় সেই পর্যায়ে নিয়ে আসা এবং ডিজেলে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন আপাতত স্থগিত করলাম। তাতে অনেক টাকা সাশ্রয় হবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে ডিজেলের দাম আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। ডিজেল ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে আরও যত ব্যয় আছে সেটাও কমিয়ে আনতে হবে। এটা আমাদের সবার সমস্যা- এটা যদি মনে করে, ধৈর্য ধরে সময়টা অতিক্রম করতে চাই, তাহলে আমরা অবশ্যই পারব।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, এখন থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সারাদেশে এক দিন পেট্রল পাম্প বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে বন্ধ রাখা হবে, সেটা পরে জানানো হবে। বন্দর এলাকায় সপ্তাহে দুই দিন পেট্রল পাম্প বন্ধ রাখার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এলাকাভিত্তিক আমরা ঠিক করেছি। আগে থেকে আমরা গ্রাহকদের জানিয়ে দেব। সে অনুপাতে আমরা লোডশেডিংয়ে চলে যাব। এটা আমাদের বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার জন্য করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখব প্রথম সপ্তাহে। কী রকমভাবে এফেক্ট হচ্ছে কোন এলাকাতে। ইতিমধ্যে আমরা মনে করছি যে, দুই থেকে এক ঘণ্টার মতো মেজার নেব লোডশেডিংয়ের জন্য। সেটা দেখে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’ গাড়িতে যাতে তেল কম ব্যবহার করা হয়, সেজন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও জানান নসরুল হামিদ।

এদিকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারি-বেসরকারি অফিস ভার্চুয়ালি করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়। সরকারি অফিসগুলোতে কীভাবে সময় কমিয়ে আনা যায়, সেটাও ভাবা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।

বৈঠকে জানানো হয়, সরকারি অফিসগুলো ভার্চুয়ালি পরিচালনার ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সমন্বয় করবে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে দেশের সব বিপণি বিতান রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করার সিদ্ধান্তটি পুনর্বহালের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে বৈঠকে।

এ প্রসঙ্গে আহমদ কায়কাউস বলেন, আগে থেকে নিয়ম আছে ৮টা বাজে বন্ধ করার। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা যাচ্ছে ৮টার পরও খোলা রেখেছে। আমরা কিন্তু বারবার যে আইনটা আছে সেটা পালন করার কথা বলছি। সেটা হলে পরে আমাদের অনেক সাশ্রয় হবে। আমদানি নির্ভরতা কমানোর দিকে সরকার বেশ মনোযোগ দিচ্ছে বলেও ফুটে উঠেছে মুখ্য সচিবের কথায়।

আহমদ কায়কাউস বলেন, আমাদের যত বেশি রপ্তানি বাড়ানো যায় সেটাই করতে হবে। আমদানি আমাদের কমাতে হবে। সেটা তেল হোক, অন্য যেকোনো জিনিস হোক। দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাত আমদানি নির্ভর জানিয়ে তিনি বলেন, সেজন্য আমাদের আমদানিটাকে কিভাবে সাশ্রয় করা যায়, সেটা আপনাদের চিন্তা করতে হবে।

জ্বালানি তেল ও গ্যাসের আমদানি মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার রয়েসয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বিদ্যুতের যাওয়া-আসার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। কয়েক বছর ধরে সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের অভ্যাসের কারণে বিদ্যুতের যাওয়া-আসা মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে, সামাজিক মাধ্যমে অসন্তোষের কথা তুলেও ধরছেন হাজারো মানুষ।

সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য, বিশেষ করে এলএনজির দামে লাফ, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কয়লা সরবরাহে বিঘ্নের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে হয়েছে। পাওয়ার সেলের তথ্যানুযায়ী, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। সেই জায়গায় উৎপাদন হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত। জ্বালানি তেলের দাম বেশি বলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো যাচ্ছে না। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং কোভিড-পরবর্তী চাহিদা বাড়ায় আগামী কয়েক মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়তির দিকে থাকবে বলেই পূর্বাভাস আছে।

এদিকে রাজধানীতে কখন কোন এলাকায় লোডশেডিং হতে পারে তার সম্ভব্য সময়সূচি জানিয়ে দিয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি)।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিকাশ দেওয়ান বলেন, এলাকাভিত্তিক সম্ভাব্য লোডশেডিংয়ের তালিকা করে ওয়েবসাইটে আপলোড করে দেয়া হয়েছে। গ্রাহকরা ওয়েবসাইটে গেলেই সেখানে একটি লিংক পাবেন, সেখানে ক্লিক করে তাদের এলাকার সম্ভাব্য লোডশেডিংয়ের সময় জানতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বৈঠকে দেশের সব বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিকে এ ধরনের তালিকা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

গ্রাহকরা এ তথ্য কীভাবে পাবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিগগিরই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওয়েবসাইট ও লিংক প্রকাশ করা হবে।’ যদিও রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেখানে ক্লিক করে তালিকা খোলা সম্ভব হয়নি।