ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪
আপডেট : ২৫ নভেম্বর, ২০২২ ১৭:০৪

বিএনপির ১০ ডিসেম্বর মহাসমাবেশ থেকে আসছে নতুন কর্মসূচি

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির ১০ ডিসেম্বর মহাসমাবেশ থেকে আসছে নতুন কর্মসূচি

 

এই মুহূর্তে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত শব্দ ‘১০ ডিসেম্বর’। এই দিন ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। সমাবেশ ঘিরে বাড়ছে জল্পনাকল্পনা।
১০ ডিসেম্বর নিয়ে বিএনপির নেতারা কঠোর হুশিয়ারি থেকে সরে এসে কিছুটা নমনীয় হয়েছে। তবে যে কোনো মূল্যে এদিন নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমিতি দিতে প্রশাসনের প্রতি আহবানও জানিয়েছে দলটি।
সূত্র বলছে, বিভাগীয় সমাবেশের মত ঢাকার সমাবেশও শান্তিপূর্ণ করতে চান বিএনপি। শান্তিপূর্ণ এ সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলটি।

মূলত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সূত্রপাত হয় দলটির দ্বিতীয় সারির কয়েকজন নেতার বক্তব্যের রেশ ধরে। গত ৮ অক্টোবর এক আলোচনা সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, 'আগামী ১০ ডিসেম্বরের পরে দেশ চলবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায়।' এর রেশ কাটতে না কাটতেই এক দিন পর দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী লক্ষ্মীপুরে দলীয় কর্মসূচিতে বলেন, 'শিগগির তারেক রহমান দেশে আসবেন।'
এর পরদিন দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুক বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ হবে ‘আটলান্টিক মহাসাগরের’ মতো। এই সমাবেশে খালেদা জিয়া যাবেন। হয়তো পুলিশ বাসার গেটে বাধা দেবে। ম্যাডাম তো আর পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করবেন না। তিনি সেখানেই দাঁড়িয়ে যাবেন। আমরাও প্রতিবাদ শুরু করব সেখান থেকে। মার্চ ফর ডেমোক্রেসির সময়ও তাই হয়েছিল। এবারও তাই হবে।’

এসব বক্তব্যগুলোর পর রাজনীতি অঙ্গনে শুরু হয় নানা আলোচনা। নড়েচড়ে বসে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বাড়তে থাকে নানা তৎপরতা। ১০ ডিসেম্বর নিয়ে কথা বলা শুরু করেন ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-নেতারা। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় কী করতে চায় বিএনপি তা এখনো পরিষ্কার না। তবে সূত্র বলছে এখনোই অবরোধ বা সরকার পতনের মত কঠোর অবস্থানে যাবে না বিএনপি। বড় সমাবেশ করাই তাদের লক্ষ্য এবং সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

সূত্র বলছে, আগামী বছরের শেষের দিকে চূড়ান্ত কর্মসূচি যাবে বিএনপি। এর আগ পর্যন্ত নানান কর্মসূচি দিয়ে নেতাকর্মীদের রাজপথে রাখবে।

নতুন কী কর্মসূচি আসবে তা এখনও নির্ধারণ হয়নি। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনার পরই চূড়ান্ত হবে। তবে, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের আগে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চায় বিএনপি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দলীয় সংসদ সদস্যদের জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ ও সরকার বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করা।

১০ ডিসেম্বরে ঢাকা সমাবেশ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করব। আমাদের দাবিও পরিষ্কার। বলেছি জ্বালানিতে মূল্যবৃদ্ধি এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে। এখনো তো আসল ঘোষণা দেইনি, আসল ঘোষণা আসবে ১০ তারিখে। সেদিন থেকে শুরু হবে এক দফার আন্দোলন।

ইতোমধ্যে ঢাকার মহাসমাবেশে সাংগঠনিক শক্তি জানান দিতে বড় ধরনের শোডাউন করার প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকেও বিএনপি সাংগঠনিকভাবে কতটা চাঙ্গা তার প্রমাণ দিতেই লোক জমায়েত বেশি করবে দলটি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, স্পষ্ট করে বলছি, আগামী ১০ ডিসেম্বর আমরা স্বতঃস্ফূর্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করব, বিপুল জনসমাগম হবে।

গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি। ইতোমধ্যে সাতটি বিভাগে সমাবেশ শেষ হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি সমাবেশেই বিএনপিকে প্রতিকূলতার বাধা ডিঙ্গাতে হয়েছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে বাস ও লঞ্চ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ছোট-খাটো পরিবহনও ছিল কড়াকড়ির আওতায়। সরকারি দলের নেতাকর্মীদের সশস্ত্র মহড়া ও হামলাও ছিল সমানতালে।

বিএনপি নেতা-কর্মীদের এসব প্রতিকূলতা পেরিয়েই প্রতিটি সমাবেশে যোগ দিতে দেখা গেছে। এসব কর্মসূচিতে উপস্থিতিও ছিল বেশ লক্ষণীয়। নেতাকর্মীরা খেয়ে না খেয়ে নির্ঘুম রাত পার করে সমাবেশে অংশ নিয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। শুধু তৃণমূলই নয়, সাধারণ মানুষও সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে।

উপরে