ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪
আপডেট : ১৭ নভেম্বর, ২০২০ ১৭:৫৭

ফলমূল অনেকদিন তাজা রাখতে নতুন প্রযুক্তি

অনলাইন ডেস্ক
ফলমূল অনেকদিন তাজা রাখতে নতুন প্রযুক্তি


আধুনিক যুগে খাদ্যপণ্যের অপচয় বড় সমস্যা। কৃষিপণ্যের সীমিত আয়ু সেই সমস্যা আরও প্রকট করে তোলে। প্রাকৃতিক আবরণের মাধ্যমে একটি কোম্পানি ফলমূল ও শাকসবজি আরও বেশিদিন তাজা রাখার ব্যবস্থা করে পথ দেখাচ্ছে।
হয় খেতে অথবা ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেবার সময় ফলমূল ও তরিতরকারি পচে যায়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও-র সূত্র অনুযায়ী গোটা বিশ্বে ফসলের প্রায় ১৪ শতাংশ খাদ্য বাজারে বা খুচরা বিক্রেতার হাতে পৌঁছানোর আগেই নষ্ট হয়ে যায়।
‘অ্যাপিল সায়েন্সেস’ নামের ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক এক কোম্পানি এমন পরিস্থিতি বদলাতে সম্ভবত সাহায্য করতে পারে। কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা জেমস রজার্স ও তাঁর সহকর্মীরা এমন তরল পদার্থ তৈরি করেছেন, যা ফলমূল ও তরিতরকারি আরও বেশিদিন তাজা রাখতে পারে।
জেমস বলেন, ‘‘অ্যাপিল শব্দটা অনেকটা ‘পিল’ বা খোসা ছাড়ানোর মতো। তাজা পণ্যের উপর আমরা সেটি প্রয়োগ করি। সেটা দেখা যায় না, তার স্বাদ পাওয়া যায় না। তবে ফল পাকার প্রক্রিয়ার গতি কমিয়ে দেয়।’’
এমনকি রেফ্রিজারেশন ছাড়াও এই প্রক্রিয়া কাজ করে। অ্যাপিল এমন এক তরল আস্তরণ, যা শুকিয়ে ভোজ্য স্তর হয়ে ওঠে। এই স্তর যে কোনো তাজা পণ্যকে চার গুণ পর্যন্ত বেশি টেকসই করে তোলে। ফলে পরিবহন, মজুত ও খাওয়ার জন্য বাড়তি সময় পাওয়া যায়।
লিপিড এবং ফলমূল ও শাকসবজির প্রাকৃতিক যৌগিক পদার্থের উপর ভিত্তি করেই অ্যাপিল তৈরি করা হয়েছে। সেই সব পদার্থ নিঃসরণ করে প্রয়োজনীয় দ্রবণ তৈরি করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেমস রজার্স বলেন, ‘‘সঠিক অনুপাতে সেগুলির মেলবন্ধন ঘটালে শুকানোর পর আমাদের হাতে ফল পাকার প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ চলে আসে। অর্থাৎ পানি নির্গমন ও অক্সিজেনের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। বিভিন্ন ধরনের তাজা পণ্যের জন্য সঠিক ফর্মুলা স্থির করার নতুন কৌশল আমরা শেখাচ্ছি। লেবু, শসা বা অ্যাভোকাডোর উপর যে সুরক্ষা স্তর থাকে, সে রকমই কবচের ব্যবস্থা করছি।’’
নেদারল্যান্ডসের পাইকারি কোম্পানি ‘নেচার্স প্রাইড’ বছরে প্রায় এক লাখ বিশ হাজার টন ফলমূল ও শাকসবজি বিক্রি করে। ল্যাটিন অ্যামেরিকাসহ ৫৯টি দেশ থেকে সেগুলি আমদানি করা হয়। বাছাই, মোড়কবন্দি ও খুচরা বিক্রেতার কাছে পাঠানোর আগে আমদানি করা কৃষপণ্য রটারডাম শহরে পাকতে থাকে। এই শিল্পখাতে পণ্য নষ্ট হওয়া সাধারণ সমস্যা। কিন্তু এই কোম্পানি ভবিষ্যতে লোকসানের মাত্রা কমানোর আশা করছে। 
কোম্পানির প্রতিনিধি আড্রিয়েলে ডানকিয়ার বলেন, ‘‘কোনো ভোক্তা খাদ্য ফেলে দিলে মনে রাখতে হবে, যে সেই ব্যক্তি সেটি কিনেও ব্যবহার করেননি। সেই খাদ্যের অর্থমূল্য রয়েছে। অর্থাৎ গোটা শৃঙ্খলের মধ্যে কোনো কিছু ফেলে দেওয়া না হলে ভুল করে আপনি সেই পণ্য কিনবেন না। অ্যাপিল ব্যবহার করে আমরা খুচরা ব্যবসায়ীদের পর্যায় খাদ্যের অপচয় ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনতে পারি।’’
এখনো পর্যন্ত প্রধানত বড় কোম্পানিগুলিই নতুন এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করছে। ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর সেই সামর্থ্য নেই। কিন্তু অ্যাপিল ব্যবসার নতুন এক মডেলের মাধ্যমে সেই পরিস্থিতি বদলাতে চাইছে।
এর আওতায় প্রয়োজনীয় কাঠামো গড়ে তুলতে খুচরা ব্যবসায়ী ও সুপারমার্কেটগুলি ছোট আকারের কৃষি উৎপাদনকারী ও চাষিদের অর্থের জোগান দেবে। বিনিময়ে তারা আরও টেকসই কৃষিপণ্য পাবে। যে সব জায়গার চাষিরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ পান নি, তাঁরাও উপকৃত হবেন। 
জেমস রজার্স মনে করিয়ে দেন, ‘‘অ্যাপিলের মাধ্যমে পরিবহণের ব্যয় কমিয়ে মান বাড়ানোর সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এটা কোনো সহায়তা নয়। ছোট আকারের উৎপাদনকারী তাঁর কৃষিপণ্যের মূল্যের কিছু অংশ হাতে পাচ্ছেন।’’
কৃষিপণ্যের আয়ু বাড়ালে কিছু সুবিধা অবশ্যই পাওয়া যাবে। কিন্তু খাদ্যের ক্ষতি ও অপচয়ের সমস্যা দূর হবে না। সেটা করতে হলে পরিবহণ ও রেফ্রিজারেশন প্রণালীর উন্নতি ও সম্প্রসারণের প্রয়োজন হবে। সেইসঙ্গে ভোক্তাদেরও খাদ্যের অপচয় বন্ধ করতে হবে। যেটুকু খাওয়া হবে, সেটুকুই কিনতে হবে। সূত্র : ডয়চে ভেলে।

উপরে