ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
আপডেট : ৪ জুন, ২০২০ ২৩:৫১

ফরিদপুরে অসহায় মানুষের আশ্রয়স্থল জেলা পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফরিদপুরে অসহায় মানুষের আশ্রয়স্থল জেলা পুলিশ


ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের সিনিয়র স্টাফ নার্স কাকলী বেগম ঢাকার একটি হাসপাতালে ২২ দিন আগে মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়ার তিনদিন পরেই মারা যান। এর কদিন পরেই ঈদুল ফিতরের দিনে তার স্বামী মোবারক হোসেনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে।
বর্তমানে তিনি আইসোলেশনে রয়েছেন। সদ্যজাত এই দুধের শিশু এখন প্রতিপালন হচ্ছে দাদির কোলে। পুরো বাড়িতে চলছে শোকের পাঁশাপাশি করোনার থাবা।
বিষয়টি জানতে পেরে তাদের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ফরিদপুরের পুলিশ প্রশাসন। দুগ্ধজাত এই শিশু ও তাঁর পরিবারের এ খবরটি জানতে পেরে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করে রেখেছেন তাদের সার্বক্ষণিক খবর নিতে। তাদের জন্য ফলফলাদিসহ উপহার পাঠিয়ে আশ্বস্ত করেছেন যেনো মনোবল না হারায় তারা।
মোবারক হোসেন বলেন, এসপি স্যারের এই মহানুভবতায় নিদারুণ কষ্টের মাঝেও একটু সান্তনা পেয়েছি। আশার আলো দেখছি।
শুধু মোবারক হোসেনের পরিবারেই নয়, সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ফরিদপুরের পুলিশ প্রশাসনের গৃহিত নানা মানবিক কার্যক্রম অসংখ্য অসহায় পরিবারে স্বস্তি এনেছে। ফরিদপুর জেলা পুলিশ সদস্যরা তাদের বেতনের টাকার একটি অংশ দিয়ে চলছে নিয়মিত এ সহায়তা কার্যক্রম।
এ পর্যন্ত ফরিদপুর পুলিশ সদস্যদের বেতন থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা সংগ্রহ করে ফরিদপুরের অনেক অসহায় পরিবারে সহায়তা দেয়া হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপারের আহ্বানে জেলা পুলিশের ১৫৫০ জন সদস্যের বেতনের টাকার একটি অংশ মানবিক সহায়তা হিসেবে প্রতি মাসে যুক্ত হচ্ছে এই তহবিলে। সব সদস্য স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসেন এই কাজে।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি শিপ্রা গোস্বামী গণমাধ্যমকে বলেন, সাম্প্রতিক করোনাকালের শুরু হতেই ফরিদপুরের পুলিশ বিভাগের গৃহিত নানামুখী কার্যক্রম শুধু জনসাধারণের নজরই কাড়েনি, তাদের মাঝে আশার আলো ছড়িয়েছে এই ক্রান্তিকালে বেঁচে থাকার।
জেলা পুলিশের পক্ষ হতে অসহায় মানুষের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সাইফুজ্জামানকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে একটি ত্রাণ বিতরণ কমিটি। চালু করা হয়েছে হটলাইন। অসহায় মানুষের ফোন পেলেই পুলিশের রিজার্ভ অফিসার এসআই আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে পৌঁছে দেয়া হয় খাবার সামগ্রী। যেই পুলিশ অফিসে একসময় ভুক্তভোগীরা যেতো আইনি সহায়তায়, সেখানে এখন ত্রাণের জন্য অসহায় মানুষের দীর্ঘ সারি।
ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এই সময়ে পুলিশ তাদের নিয়মিত ডিউটি হিসেবে জনসাধারণকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জীবনযাপনে উৎসাহিত করার জন্য সড়কে আল্পনা এঁকেছে তুলি হাতে, দোতারা ও গিটার হাতে স্বরচিত গান গেয়েছে করোনা সচেতনায়। পাঁশাপাশি খবর পেলেই অসহায় মানুষের তাদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিয়েছে।
দূরদূরান্তের জেলা থেকে আসা যেসব দিনমুজর আটকে পড়ে ছিলো তাদের মাঝে গভীর রাতে সেহরিসহ রান্না করা খাবার বিতরণ করেছে। মৃত্যু পথযাত্রী মানুষকে রক্ত দিয়ে প্রাণে বাঁচতে সাহায্য করেছে।
এই ঈদুল ফিতরের সময় ত্রাণের সঙ্গে চাল, ডাল, তেল, লবন, আলুর সঙ্গে তাদের দেয়া হয়েছে দুই প্যাকেট সেমাই, চিনি, দুধ, চারটি ডিম। প্রত্যেক থানায় গ্রাম পুলিশকেও দেয়া হয়েছে এসব উপহার। মুক্তিযোদ্ধা পুলিশকে সম্মানিত করেছে তারা। কর্তব্যরত অবস্থায় যেসব পুলিশ সদস্য মারা গেছেন তাদের পরিবারকে বিশেষ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও ইমাম ও মুয়াজ্জিন, বাউল শিল্পী ও মেডিকেল ট্রেকনোলজিস্ট যারা করোনা যুদ্ধে কাজ করছেন তাদেরকেও নানাভাবে সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে। গোপনে দু:স্থ মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
লকডাউনে বন্ধ হওয়া পতিতা পল্লীর ১৬২ যৌনকর্মীদের মাঝে তারা খাদ্য সহায়তা বিতরণ করেছে। খ্রিষ্টান চার্চ ও পরিবহণ শ্রমিকদেরও খবর নিয়েছেন তারা।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামানের চৌকস নেতৃত্ব ও আন্তরিকতার কারণেই আমরা এই দুর্যোগকালে অসহায় মানুষের পাঁশে দাঁড়াতে পেরেছি। তার আহ্বানে সব পুলিশ সদস্য বেতনের একটি অংশ ত্রাণ তহবিলে দিচ্ছেন। বড় কথা, তিনি আমাদের সাথে খুবই বন্ধুবৎসল। সব কথাই আমরা তার সঙ্গে শেয়ার করতে পারি।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বের বিষয়টি পুলিশ সদস্যদের জানানোর পরে তারা স্বেচ্ছায় নিজেদের বেতনের একটি অংশ দিয়ে মানুষের পাঁশে দাঁড়িয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক এই দূর্যোগে আমরাও সামিল হতে চাই অসহায় মানুষের সুখ-দুঃখের অংশিদার হতে।

উপরে