logo
আপডেট : ৩ জুন, ২০২০ ১৫:০৪
মাধুরীর জন্য নামসহ সবকিছু পাল্টে ফেলেছিলেন তিনি
নিজস্ব প্রতিবেদক

মাধুরীর জন্য নামসহ সবকিছু পাল্টে ফেলেছিলেন তিনি


আশি ও নব্বইয়ের দশকে সবার কাছে মাধুরী দীক্ষিত মানেই যেন মুগ্ধতা। তাঁর রূপে, গুণে মুগ্ধ হননি এমন কেউ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেসময়ে তাঁর রূপ ও গুণমুগ্ধদের মধ্যে অন্যতম এক নাম এম এফ হোসেন। বিশ্বমানের এই চিত্রশিল্পী মাধুরীর প্রতি এতটাই মোহিত ছিলেন যে, নিজের নাম থেকে পোশাক, সবই পাল্টে ফেলেছিলেন তাঁর জন্য। এমনকি, মাধুরীর জন্য তাঁকে যেতে হয়েছিল হাসপাতালেও।
|১৯৯৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল মাধুরী দীক্ষিতের সুপারহিট ছবি ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’। ভরপুর পারিবারিক বিনোদনের এই ছবিতে মাধুরী অভিনয় করেছিলেন উচ্ছল তরুণী নিশার ভূমিকায়। পর্দায় নিশার ভূমিকায় মাধুরীকে দেখে এতটাই মুগ্ধ ছিলেন হোসেন যে, তিনি মোট ৯৫ বার দেখেছিলেন ছবিটি। মুম্বাইয়ের লিবার্টি সিনেমা হলের নির্দিষ্ট আসনে তাঁর জন্য সিট বুক করা থাকত। ‘হাম আপ কে হ্যায় কৌন’ ছবির সময় মাধুরী ছিলেন ২৭ বছর বয়সি। হোসেনের বয়স সে সময় ৭৯ বছর।
মাধুরীর সৌন্দর্য ও হাসিতে অবসেসড চিত্রশিল্পী ঠিক করলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন। মাধুরীর ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে সাক্ষাতের সময় ঠিক হল। নিজের হাতে মাধুরীর প্রিয় বিরিয়ানি রান্না করে হোসেন মার্সিডিজ চালিয়ে পৌঁছান মাধুরীর বাড়িতে। সে দিন মাধুরী ও দীক্ষিত পরিবারের সবার সঙ্গে হোসেনও জমিয়ে বিরিয়ানি খেয়েছিলেন।
মাধুরীর ছবির সেটে প্রায়ই হাজির থাকতেন হোসেন। বলা যায়, মাধুরীকে নিজের জীবনের অঙ্গ করে নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল মাধুরীর ছবি ‘মোহাব্বত’। ছবির প্রযোজক ছিলেন মাধুরীর সেক্রেটারি রাকেশ নাথ। পরিচালক ছিলেন রাকেশ নাথের স্ত্রী রিমা। সে ছবির সেটেও পৌঁছান হোসেন। সেখানে সবাই তাঁকে দেখে চমকে যান। কারণ চিরপরিচিত কুর্তা পায়জামা ছেড়ে হোসেন তখন পরেছিলেন শার্ট ট্রাউজার্স এবং মাথায় টুপি।
শোনা যায়, মাধুরীর জন্যই নতুন লুকে ধরা দিয়েছিলেন তিনি। রাকেশ নাথের অনুরোধে এই ছবিতে ছোট্ট ক্যামিয়ো ভূমিকায় অভিনয়ও করেন শিল্পী হোসেন। শুধু মাধুরীর সঙ্গে অভিনয় করবেন বলে তিনি এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন। তাঁর মাধুরী-অবসেশন এখানেই শেষ নয়। পরে হোসেন মাধুরীর জন্য ছবি পরিচালনাও করেন। মাধুরীকে নিয়ে তিনি পরিচালনা করেন ‘গজগামিনী’। গল্পও লিখেছিলেন তিনি নিজেই।
এই সময়েই তিনি নিজের নামও পাল্টে ফেলেন। তাঁর নাম ছিল মকবুল ফিদা হোসেন। তিনি পাল্টে করে নেন ‘ম্যাকবুল ফিদা হোসেন’। মজা করে অনেকে তাঁকে বলতেন ‘মাধুরী ফিদা হোসেন’। পরে হোসেন যখন ‘মীনাক্ষি’ ছবির কথা ভাবেন, তাঁর মনে মাধুরী ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। কিন্তু তখন মাধুরী বিয়ে করে প্রবাসে চলে যান। তাঁর ম্যানেজার রাকেশ নাথ অনুরোধ করেন হোসেনকে, যাতে তিনি অন্য কোনও নায়িকার কথা ভাবেন। এই প্রসঙ্গে দু’জনের তীব্র মতান্তর হয়েছিল।
পরে মাধুরী নিজেও হোসেনকে জানান, তাঁর পক্ষে তখন আমেরিকা থেকে ভারতে আসা সম্ভব নয়। তাই শেষ অবধি ছবি হয়েছিল টাবুকে নিয়ে। গুঞ্জন ছিল, সেই ছবিতে বেশ কিছু সাহসী দৃশ্য ছিল। সে কারণেই মাধুরী প্রস্তাব এড়িয়ে গিয়েছিলেন।

এক বার অসুস্থ হোসেনকে ভর্তি করা হয়েছিল মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে। তাঁকে দেখতে সেখানে পৌঁছেছিলেন মুম্বাইয়ের এক জনপ্রিয় সাংবাদিক। তিনি আবার মাধুরীরও ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। প্রবীণ শিল্পীর কাছে গিয়ে চমকে যান সে সাংবাদিক। হাসপাতালের ওয়ার্ডের মেঝেতে ফরাসে বসে একের পর এক মাধুরীর পোর্ট্রেট এঁকে যাচ্ছিলেন হোসেন।
ওই সাংবাদিকের দাবি, হোসেন তাঁকে বলেছিলেন প্রতিদিনের ব্যস্ততা থেকে দূরে সরে তিনি এ ভাবেই নিজের কাজ করতে ভালবাসেন। সে সময় অসুস্থতা নাকি ছিল তাঁর অজুহাত মাত্র