logo
আপডেট : ২৩ মে, ২০২০ ২১:২৮
প্রথমবারের মত বাজেট ভর্তুকি ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াচ্ছে
অনলাইন ডেস্ক

প্রথমবারের মত বাজেট ভর্তুকি ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াচ্ছে


সরকার আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে। এ খাতে এবারই প্রথমবার ৫২ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। যা চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে পাঁচ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা বেশি। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত ছয় অর্থবছর ধরে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ছে। তবে এবার ভর্তুকির এই পরিমাণ অন্যবারের তুলনায় অনেক বেশি।
চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিলো ৪৭ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এটা চলতি বাজেটের সংশোধনীতে বাড়িয়ে ৪৮ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা করা হয়। করোনাভাইরাসের কারণে থমকে গেছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। বাংলাদেশে করোনার যে আচমকা আঘাত সেটার রেশ টানতে হবে অনেক বছর। অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে থাকবে। এ বিরূপ প্রভাব কটিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ভর্তুকি, প্রণোদনার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাধারণত ভর্তুকি বেশি দেওয়া হয় কৃষি ও খাদ্য খাতে। আর প্রণোদনা বেশি দেওয়া হয় কৃষি, পোশাক রপ্তানি ও পাট খাতে। এছাড়া নগদ ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডসহ (পিডিবি) অন্যান্য সংস্থাকে। তবে বিপিসি, পিডিবিকে যে নগদ ঋণ দেওয়া হয় সেগুলোকে এক ধরনের ভর্তুকি হিসেবেই দেখা হয়ে থাকে। কারণ এসব ঋণ সাধারণত সরকার ফেরত পায় না। যে কারণে পরে পুরো ঋণই অনুদান, ভর্তুকিতে রূপান্তরিত হয়। বেসরকারি খাত থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বিদ্যুৎ পেতে পিডিবিকে ঋণ দেয় সরকার।
আগামী বাজেটে ভর্তুকি : অন্যবারের মতো আগামী অর্থবছরেও ভর্তুকিতেই বেশি বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ২৩ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা। যা চলতি বাজেটের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৭৬১ কোটি টাকা বেশি। চলতি বাজেটে এখাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিলো ২৪ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে করা হয় ২৩ হাজার ১৯২ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরে ভর্তুকির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেওয়া হবে বিদ্যুৎ খাতে। বিদ্যুতে ভর্তুকির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছর থেকে আগামী অর্থবছরে এ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা কমছে। চলতি অর্থবছর এ খাতে ভর্তুকি রয়েছে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। খাদ্যে ভর্তুকির পরিমাণ ধরা হচ্ছে ৫ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা। খাদ্যে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এখাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিলো ৪ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে সেটা কমিয়ে ৪ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা করা হয়।
এ ছাড়া অন্যান্য খাতের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে যা ছিলো ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা তবে সংশোধিত বাজেটে সেটি কমিয়ে রাখা হয় ৯ হাজার কোটি টাকা।
প্রণোদনা : আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রণোদনার টাকা চলতি সংশোধিত বাজেটের চেয়ে বাড়ছে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ হচ্ছে ২২ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। যা চলতি সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। অবশ্য চলতি মূল বাজেটে এখাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিলো ১৯ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে করা হয় ১৮ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরে কৃষি খাতের জন্য ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রণোদনার রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে যা রাখা হয়েছিলো ৯ হাজার কোটি টাকা। তবে পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে রাখা হয় ৮ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া চলতি বাজেটের সমান পরিমাণ ৬ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে রপ্তানি নগদ প্রণোদনার জন্য। এছাড়া পাট খাতের জন্য রাখা হচ্ছে চলতি বাজেটের ন্যায় ৫০০ কোটি টাকা এবং রেমিট্যান্সে প্রণোদনার জন্য রাখা হচ্ছে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা।
নগদ ঋণ : আসছে বাজেটে নগদ ঋণ খাতে ৬ হাজার কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। তবে এই ছয় হাজার কোটি টাকার মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরেও এ দুই খাতে কোনো বরাদ্দ রাখেনি সরকার। আগামী বাজেটেও অন্যান্য খাতে ছয় হাজার কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে এখাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিলো ৪ হাজার কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে এটি বাড়িয়ে ৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ড. এবি মিজা আজিজুল ইসলাম বলেন, আগামী বাজেটে কৃষি ও খাদ্য খাতে যে ভর্তুকি বাড়ানো হচ্ছে এটা যুক্তিযুক্ত। করোনা প্রভাব মোকাবেলায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাই এখাতে বরাদ্দ বেশি দিতেই হবে। কিন্তু জ্বালানি খাতে গ্যাস বা এলএনজি আমদানিকে ভর্তুকি বাড়ানোটা যুক্তিযুক্ত নয় বলে মনে করি।
আর আরেক সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বাজেট ভর্তুকি বাড়ছে এটা ভাল খবর। কিন্তু ভর্তুকির টাকাটা যাদের উদ্দেশ্যে বরাদ্দ থাকে তাদের কাছে পৌঁছানোর নিশ্চয়তা থাকতে হবে। ভর্তুকির অর্থ খরচের হিসাবটা হতে হবে স্বচ্ছ। এখানে জবাবদিহিতা নেই বলেই তো ত্রাণের চাল, টাকা ঠিকমত বিতরণ করা যায় না। ফলে ভর্তুকি খাতে স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে না পারলে এটা কোন কাজে আসবে না।