ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪
আপডেট : ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১১:৩৫

ভোটের আগে সীমান্তে অস্ত্রের ঝনঝনানি

প্রতিদিন ডেস্ক
ভোটের আগে সীমান্তে অস্ত্রের ঝনঝনানি

রাজশাহীর বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অস্ত্রের চোরাচালান বেড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, আসন্ন সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অস্ত্রের চাহিদা বেড়েছে। তাই চোরাপথে অবৈধ অস্ত্রের আমদানিও বেড়েছে। তবে অস্ত্রের চালান জব্দ করতে তারা তৎপর।

শুক্রবার ভোরে রাজশাহীর চারঘাট সীমান্ত থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি ম্যাগজিন ও পাঁচ রাউন্ড গুলিসহ এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার নাম সুজন আলী ওরফে জিল্লুর। চারঘাট উপজেলার টাঙ্গন এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) অভিযান চালায়।

জেলা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান জানান, দুটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি ম্যাগজিন ও পাঁচ রাউন্ড গুলি কোমরে গুঁজে নিয়ে যাচ্ছিলেন সুজন। তখন ডিবি পুলিশের একটি দল তাকে আটক করে। এ নিয়ে থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সুজনের বাড়ি চারঘাটের কান্দিপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মহসিন আলী। সুজন একজন অস্ত্র বিক্রেতা।

এর আগে গত বুধবার রাজশাহী মহানগরীর শালবাগান এলাকা থেকে একটি ওয়ান শুটারগানসহ আলম ওরফে কালু নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। চন্দ্রিমা থানার পুলিশ তাকে আটক করে। এরও আগে গেল অক্টোবরে নগরীর সপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছয়টি বিদেশি পিস্তল, নয়টি ম্যাগজিন ও ৭৫ রাউন্ড গুলিসহ ইমরান আলী নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে র‌্যাব।

সেদিন র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুবুল আলম জানান, ভারত থেকে দুটি হাতবদলের পর আটক ইমরান অস্ত্রগুলো তার হাতে পান। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নাশকতা চালাতে অস্ত্রগুলো ঢাকার সেলিম হোসেন নামের আরেক ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছানোর দায়িত্ব ছিল তার। ইমরানের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর ধোবড়াপাড়া গ্রামে।

এদিকে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত কৌশল পরিবর্তন করায় তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। সম্প্রতি অভিযানে বিপুলসংখ্যক পিস্তল ও গুলিসহ বেশ কয়েকজন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে এমন তথ্য। এ অবস্থায় সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র চোরাচালান বন্ধে তৎপরতা বাড়ায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

কিন্তু সীমান্ত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনে সুনসান থাকলেও রাত হলেই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ঘিরে চোরাকারবারিদের তৎপরতা শুরু হচ্ছে। সীমান্তরক্ষীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ করছে দেশে। এরপর রাজশাহীর খানপুর, খিদিরপুর, চর মাজারদিয়া ও আলাইপুর সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়ে শহরে। জেলার চারঘাট, বাঘা ও গোদাগাড়ী সীমান্তেও সক্রিয় চোরাকারবারীরা। গোদাগাড়ী সংলগ্ন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের চর আলাতুলি, কোদালকাটি, বকচর এবং শিবগঞ্জ ও ভোলাহাটের বিভিন্ন সীমান্তেও চলছে তাদের তৎপরতা। তবে অস্ত্রের কিছু কিছু চালান জব্দ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এর মধ্যে গত মঙ্গলবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার তারাপুর সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা তিনটি ওয়ানশুটার পিস্তল উদ্ধার করে বিজিবি। তবে এই অভিযানে কাউকে আটক করা যায়নি। গত ১৭ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জেই ১৭টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৯ রাউন্ড গুলি ও ১৭টি ম্যাগজিন উদ্ধার হয়। আলাদা আটটি অভিযানে এসব অস্ত্র উদ্ধার করে সীমান্তের এই নিরাপত্তা বাহিনী।

এদিকে গত ছয় মাসে র‌্যাব-৫ এর সদস্যরা ৪০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩০০ রাউন্ড গুলিসহ ৩৫ জন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। আর রাজশাহী মহানগর ও জেলা পুলিশের অভিযানে ২৭টি পিস্তলসহ গ্রেপ্তার হয় অন্তত ২৩ জন। তারপরেও থেমে নেই অস্ত্রের আমদানি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল এসব অস্ত্র কিনছে। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় র‌্যাব।

র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহাবুব আলম  বলেন, ‘বিভিন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে যারা অস্ত্র সরবরাহ করে, তাদের ওপর আমাদের কড়া নজরদারি আছে।’

একই কথা পুলিশও বলছে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী থানাগুলোতে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা ও নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ  বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে কোনো অস্ত্র ঢুকছে কি না সেটা আমরা খেয়াল রাখছি। আমরা তৎপর আছি এবং এ ধরনের কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার আবু আহাম্মদ আল মামুন  বলেন, ‘অনেক মাদক ব্যবসায়ী এবং বড় কিছু সন্ত্রাসীকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করেছি। আমাদের কাছে আরও তথ্য আছে। সামনে আরও বড় বড় অভিযান চালাব।’

এদিকে চোরাচালান বন্ধে সীমান্তে নজরদারি জোরদার করার কথা জানিয়েছেন বিজিবির ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মোহম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মাদক এবং আগ্নেয়াস্ত্র পাচার রোধে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি আছে। আর নির্বাচন সামনে রেখে অস্ত্র চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সীমান্তে টহল বাড়ানো হয়েছে। এই টহল নির্বাচনকালীনও চলমান থাকবে।

 
উপরে