ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪
আপডেট : ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৬:৩৫

বাগাতিপাড়ায় মাল্টা চাষে ব্যাপক সাফল্যের সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাগাতিপাড়ায় মাল্টা চাষে ব্যাপক সাফল্যের সম্ভাবনা


নাটোরের বাগাতিপাড়ায় যৌথভাবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাল্টা চাষ করা হচ্ছে। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির মাধ্যমে মাল্টা চাষের পাশাপাশি সাথি ফসল হিসেবে পেয়ারা, কুল, লেবুসহ অন্য ফসল চাষে অতিরিক্ত লাভের স্বপ্ন দেখছেন অনেক। বার্ষিক প্রতি একর জমি ৫০ হাজার টাকা হিসাবে লিজ নিয়ে চাষাবাদ করা হচ্ছে।
বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের ব-দ্বীপ আকার বিশিষ্ট গয়লারঘোপ এলাকা। এর পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ বড়াল নদী বেষ্টিত এলাকাটি সবজি চাষে প্রসিদ্ধ। এখানে সবজির পাশাপাশি স্বল্প মেয়াদি ফল চাষেও এগিয়ে। এখানে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির মাধ্যমে সবজি ও স্বল্প মেয়াদি ফল চাষে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন অনেকে।
এ গ্রামের আসমত আলী একজন সফল কৃষক। তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর যাবত কৃষি কাজে সম্পৃক্ত। তিনি এককভাবে তাঁর পৈতৃক জমিসহ লিজ নেওয়া ৩ একর জমিতে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির মাধ্যমে চাষাবাদ করেন। 
তিনি কলা, পেঁপে, পেয়ারা, কুল, বিলাতি ওল ও কচুসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে একজন সফল কৃষক। তিনি কৃষিবিদ প্রভাষক গোলাম মওলা’র পরামর্শে চাষাবাদ করেন। ২ বছর আগে যৌথভাবে নাটোর মহিলা কলেজের প্রভাষক কৃষিবিদ গোলাম মওলা, আসমত আলী ও কৃষক রেজাউল করিম বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ শুরু করেন। মাল্টার সাথি ফসল হিসেবে থ্রাই-৩ জাতের পেয়ারা, কাশ্মিরি সাধারণ কুল, কাশ্মিরি বল সুন্দর কুল, টককুল ও সিডলেস লেবু গাছ রোপন করেন। 
তারা গয়লারঘোপের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে বড়াল নদীর ধারে পৃথক দুটি প্লটে ৭ একর জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন। প্লট ২টি ১০ বছর মেয়াদে বার্ষিক একর প্রতি ৫০ হাজার টাকা হিসাবে লিজ নিয়েছেন।
প্রতি একরে ৩শ' মাল্টা গাছের সাথি ফসল হিসেবে ১৫০টি পেয়ারা গাছ ও ১৫০টি কুলগাছ রোপন করেন। এছাড়া জমির একপাশের ধারে বেড়া হিসেবে ১৫০টি সিডলেস জাতের লেবু গাছ রোপন করেছেন।
সমতলে দো-আঁশ মাটি মাল্টা, পিয়ারা, কুল ও লেবু চাষের জন্য উপযোগী। বাংলা ফালগুন মাসে প্রস্তুতকৃত জমিতে নির্ধারিত দূরত্বে সারিবদ্ধ ভাবে মাল্টা, পিয়ারা ও কুল গাছের চারা রোপন করা হয়। প্রতি মালটা গাছে ২ বছর বয়স থেকে ১০ বছর পর্যন্ত প্রতি মৌসুমে ৮০ থেকে ৯০ কেজি মালটা উৎপাদন হয়। প্রতি কেজি মালটা ৯০থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রয় হয়।
প্রতি পেয়ারা গাছে দেড় বছর বয়স থেকে ৩ বছর পর্যন্ত প্রতি মৌসুমে গড় ৩০ কেজি থেকে ৩৫ কেজি পেয়ারা উৎপাদন হয়। প্রতি কেজি পিয়ারা ৩০ থেকে ৫০টাকা দরে বিক্রয় হয়। প্রতি কুল গাছে ১ বছর বয়স থেকে ১০ বছর পর্যন্ত প্রতি মৌসুমে ৩০থেকে ৪০ কেজি কুল উৎপাদন হয়। কুল প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রয় হয়। লেবু গাছে ৩ বছর বয়সে লেবুর উৎপাদন শুরু হয়। প্রতি বছর প্রতি গাছে ৫শ’ থেকে ৭শ’ লেবু ধরে। প্রতি লেবু ৫ থেকে ৭ টাকায় বিক্রি হয়।
কৃষক আসমত আলী জানান, শিক্ষিত বেকার যুবকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বল্প জমিতে মাল্টাসহ অন্য ফসল চাষের মাধ্যমে সংসার জীবন স্বাচ্ছন্দ্যে যাপন করা সম্ভব। তিনি এলাকার বেকার যুব সম্প্রদায়কে মাল্টাসহ অন্য ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন।
কৃষিবিদ প্রভাষক গোলাম মওলা জানান, প্রতি একরে প্রথম ও দ্বিতীয় বছর পর্যন্ত চারা ক্রয়, লেবার, কীটনাশক ও ছত্রাক নাশকসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৪ লাখ টাকা। পরবর্তী বছরে ব্যয়ের তুলনায় আয় বহুগুণ বাড়বে।
মাল্টার সাথি ফসল পেয়ারা প্রথম মৌসুম, কাশ্মিরী কুল তৃতীয় মৌসুম, টককুল চতুর্থ মৌসুম পর্যন্ত রাখবেন। দ্বিতীয় বছরে কুল থেকে ১ লাখ টাকা ও পেয়ারা থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হয়েছে।
ফল মৌসুমে আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে তৃতীয় ও চতুর্থ বছরে মাল্টা এবং কুল থেকে ১৩ লক্ষাধিক টাকা এবং পঞ্চম বছর থেকে পর্যায়ক্রমে শুধু মাল্টায় প্রতি মৌসুমে একর প্রতি ১০ লাখ টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন।

উপরে