ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪
আপডেট : ৫ আগস্ট, ২০২০ ১৭:০১

লেবানন বিস্ফোরণ ; বাড়ি ফেরা হলো না ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রনির

নিজস্ব প্রতিবেদক
লেবানন বিস্ফোরণ ; বাড়ি ফেরা হলো না ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রনির


টানা ছয় বছর প্রবাস জীবন কাটানোর পর গত মার্চ মাসে দেশে ফেরার কথা ছিল লেবানন প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ মেহেদী হাসান রনির (২৫)। দেশে ফেরার জন্য সব কেনাকাটাও করেছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। আজ বুধবার সকালে সেই রনির মৃত্যুর খবর আসে তার পরিবারের কাছে। 
মঙ্গলবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে জোড়া বিস্ফোরণের ঘটনায় মারা গেছেন রনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাছিহাতা ইউনিয়নের ভাদেশ্বরা গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে রনি। 
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন রনি। গ্রামের একটি স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু অভাবের কারণে পড়াশোনা বেশি দূর করতে পারেননি তিনি। বাহরাইন প্রবাসী বাবা তাজুল ইসলাম প্রবাসে সুবিধা করতে না পারায় পরিবারের কথা ভেবে রনি বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আর্থিক সংকটের কারণে সুদে ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ লেবাননে পাড়ি জমান তিনি। এর মধ্যে রনির বাবা তাজুল ইসলামও বাহরাইন থেকে দেশে ফেরত আসেন। এর ফলে পরিবারের পুরো চাপ পড়ে রনির ওপর।
লেবাননের বৈরুতে একটি বিপণন কেন্দ্রে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করতেন তিনি। মাসে ২০ হাজার টাকা পাঠাতে পারতেন বাড়িতে। কিন্তু এত অল্প বেতনের টাকা দিয়ে ঋণ শোধ করতে পারছিলেন না। এখনো সুদের ২ লাখ টাকার মতো ঋণ পরিশোধ বাকি আছে।
বুধবার দুপুরে সরেজমিন রনির বাড়িতে গিয়ে দেখে গেছে, ছেলের ছবি হাতে নিয়ে নির্বাক হয়ে বসে আছেন বাবা তাজুল ইসলাম। মা ইনারা বেগম বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন বাড়ির উঠানে। প্রতিবেশিরা সাত্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু মা ইনারা বেগমের দুই চোখ বারবার ছেলে রনিকেই খুঁজছে। ছোট বোন হ্যাপিও বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন ভাইয়ের নানা স্মৃতির কথা মনে করে।
রনির বাবা তাজুল ইসলাম জানান, গতকাল সন্ধ্যায় সর্বশেষ ছেলে রনির সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়েছে তার। বাবার সঙ্গে কথা বলে মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এরপর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি রনির সঙ্গে। রাতে রনির এক সহকর্মী ফোন করে জানান, তিনি অসুস্থ, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরপর বুধবার ভোরে আবার ফোন করে জানান, রনি মারা গেছেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা বাবা এখন ছেলের মরদেহ দেশে আনার দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে।
রনির ছোট বোন জেসমিন আক্তার হ্যাপি বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর শুনেছি আমার ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি নামাজ পড়ে দোয়া করেছি আর আল্লাহর কাছে ভাইয়ের প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছি। আজকে ভোরে শুনি আমার ভাইয়া নাই।' 
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন কাজে যাওয়ার আগে ভিডিও কল দিয়ে আমার দুই মেয়ের সঙ্গে কথা বলতো। দেশে আসবে বলে দুই ভাগ্নির জন্য চকলেট ও খেলনা কিনে রেখেছিল। বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করেছিল। কিন্তু লকডাউনের কারণে দেশে ফিরতে পারছিল না।
 মাছিহাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিনুল হক পাভেল বলেন, ঘটনার পর থেকেই আমি রনির পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। মরদেহ দেশে আনার জন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। সেজন্য আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করছি। মরদেহ আনার জন্য সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

উপরে