ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪
আপডেট : ৯ মে, ২০২০ ১৭:৫৮

রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়া

ভ্রমণ ডেস্ক
রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়া
 
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয় কুষ্টিয়াকে। ঐতিহাসিক এক উপজেলা কুমারখালী। এটি তাঁতশিল্পের জন্য বিখ্যাত। আছে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী; শিলাইদহে। সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা, লালনের আখড়া। আছে কাঙাল হরিনাথের বাড়ি ও মিউজিয়াম। সেখানে আছে ঐতিহাসিক কিছু সাক্ষী। তাই বলা চলে, যেকোনো একটি স্থানে এলেই পাশাপাশি এসব দর্শনীয় স্থানের দেখা মিলবে। কুষ্টিয়া শহর থেকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই পড়বে। সবগুলো একই দিকে, একই রাস্তায়। লোকাল পথ মাড়িয়ে যেতে হবে।
 
কুঠিবাড়ী: শিলাইদহ কুঠিবাড়ী কুষ্টিয়া শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে কুমারখালী উপজেলার অন্তর্গত শিলাইদহ ইউনিয়নের খোরশেদপুরে অবস্থিত। রবিঠাকুর বাংলাদেশে যত স্থানে পদচারণা করেছেন, তার মধ্যে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। গড়াই নদীর তীরে অবস্থিত এ শিলাইদহে কবিগুরু অনেক সাহিত্য রচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে এ অঞ্চলের জমিদারি পান। পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে জমিদার হয়ে আসেন। এখানে তিনি ১৯০১ সাল পর্যন্ত জমিদারি করেন। জানা যায়, এ সময় এখানে বসেই তিনি রচনা করেন তাঁর সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থের অনেক কবিতা।
 
জাদুঘর: ১৯৫৮ সাল থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ব্যবস্থাপনায় কুঠিবাড়ীটি সংরক্ষিত আছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কবির বিভিন্ন শিল্পকর্ম সংগ্রহ করে একে জাদুঘর হিসেবে রূপান্তর করা হয়। ভবনটি এখন দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত। জাদুঘরের নিচ ও দ্বিতীয় তলায় ১৬টি কক্ষেই কবি রবীন্দ্রনাথ, শিল্পী রবীন্দ্রনাথ, জমিদার রবীন্দ্রনাথ, কৃষকবন্ধু রবীন্দ্রনাথ অর্থাৎ নানা বয়সের বিচিত্র রবীন্দ্রনাথের ছবি। তা ছাড়া রয়েছে শিল্পকর্ম এবং তাঁর ব্যবহার্য আসবাবপত্র। আছে চঞ্চলা ও চপলা নামের দুটি স্পিডবোট, পন্টুন, আট বেহারা পালকি, কাঠের চেয়ার, টি-টেবিল, সোফাসেট, আরাম চেয়ার, পালংক ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস। রবিঠাকুর ব্যবহৃত পাতকুয়া ও চৌবাচ্চাও আছে। শিশুদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা আছে সামান্য। পুকুরের কাছে শিশু কর্ণারে। জাদুঘরটি তিন তলা। উপরের তলায় সামান্য স্পেস। প্রবেশ নিষিদ্ধ। ২০ টাকার টিকিট কেটে ঢুকে পড়তে পারবেন। রবিঠাকুরের হাতের লেখা পাণ্ডুলপি, চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। ব্যবহৃত খাট, আলমারি, লোহার সিন্দুক, নৌকা, পারিবারিক দুর্লভ ছবির সমাহার। মিউজিয়াম থেকে পুকুর ঘাটে যাওয়ার পথে চোখে পড়বে কবির ব্যবহৃত (স্মারক) পাতকুয়া ও চৌবাচ্চা। ফুল আর নান্দনিক ফুটপাত দিয়ে পুকুর ঘাটে বিশ্রাম নিন। দেখুন বজরার রেপ্লিকা। বিশ্রামের সময় অস্থায়ী মঞ্চ (মাটিতে) থেকে রবীন্দ্রসুর ভেসে আসবে। হারিয়ে যাবেন আনমনে। এখানে একদল গায়ক সব সময় রবীন্দ্রসংগীত গেয়েই চলেন। পর্যটকের চাহিদা মোতাবেক গানও গান তারা। পাশেই রয়েছে নান্দনিক ফুলের বাগান। এ পথ দিয়ে মিউজিয়াম থেকে পুকুর ঘাটে যেতে হয়। মাঝে পড়বে রবির ব্যবহৃত চৌবাচ্চা ও রান্নাঘর। মূল গেট থেকেই মিউজিয়ামে ঢুকতে হয়। এখানে বিখ্যাত কুলপি মালাই পাওয়া যায়। এখান থেকে ঘোড়ার পিঠে চড়ে ঘোরাঘুরিও করা যায়।
এখানে গীতাঞ্জলি ও সোনার তরী নামে রেস্ট হাউস আছে। বড় আকারে আবাসন ব্যবস্থা নির্মাণাধীন। একটি বড় মিউজিয়ামও তৈরি হচ্ছে। মূল গেটের পাশের ফাঁকা জায়গায়। সেখানে বৈশাখে প্রতিবছর মেলা হয়। এবার করোনাভাইরাসের কারণে মেলা হচ্ছে না।
 
যাবেন যেভাবে: বাংলাদেশের যেকোনো স্থান থেকে বাসে যেতে হবে কুষ্টিয়ায়। অথবা ঢাকা থেকে ট্রেনে যাওয়া যায় ভেড়ামারা বা পোড়াদহ স্টেশনে। তারপর অটো বা লোকাল বাসে কুষ্টিয়ায়। এরপর লোকাল বাস, অটো বা প্রাইভেটকারে আলাউদ্দিন নগর হয়ে কুমারখালীর শিলাইদহে। আর গাবতলী থেকে বেশকিছু পরিবহন বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে অথবা দৌলতদিয়ার ঘাট হয়ে নিয়মিত যাতায়াত করে।
 
থাকা ও খাওয়া: থাকার জন্য জেলা পরিষদ ডাকবাংলো আছে, আছে রেস্ট হাউস, লাইব্রেরি রুম। একটু দূরেই রবীন্দ্রনাথের কাচারি বাড়ি। কুষ্টিয়া শহরে থাকা-খাওয়ার জন্য কোনো টেনশন নেই। বাজেটের মধ্যেই হোটেল খুঁজে পাবেন।
উপরে