ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
আপডেট : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ১৮:১০

বিশ্বের-১২৫-টি-দেশ-ভ্রমণ-করেছেন-লক্ষ্মীপুরের মেয়ে সোহাগী

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বের-১২৫-টি-দেশ-ভ্রমণ-করেছেন-লক্ষ্মীপুরের মেয়ে সোহাগী

পৃথিবী ব্যাপী স্বাধীন দেশের সংখ্যা ২শ। আর জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হল ১৯৩টি। পৃথিবীর অর্ধেক দেশ ভ্রমণ করেছেন, এমন রাষ্ট্রপ্রধানের সংখ্যা পৃথিবীতে খুব কমই আছেন। অথচ রাষ্ট্রপ্রধান তো নয়ই সাধারণ একজন মানুষ হয়েও পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি দেশ ভ্রমণ করে ফেলেছেন একজন বাঙালী নারী। সে নারী বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের নাজমুন নাহার সোহাগী। তিনি বিশ্ব রেকর্ডের পথে অগ্রসর হচ্ছেন। সদ্য আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া ভ্রমণের পর তার ১২৫তম দেশ ভ্রমনের তালিকা পূর্ন হলো। সে সাথে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা ব্যক্তি উদ্যোগে পৃথিবীর ১২৫দেশের বাতাসে উড়লো। সুইডেন প্রবাসি এ নারী চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর স্বপ্ন জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হল ১৯৩টি দেশ ভ্রমণ করে পৃথিবীর প্রথম মানবী হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ঠাঁই নেয়ার।

নাজমুন পৃথিবীর এক দেশ থেকে অন্য দেশে হাজার হাজার মাইল সড়কপথে একা ভ্রমণ করে চলেছেন নিজ দেশের পতাকা হাতে। নারী হিসেবে শতাধিক স্বাধীন দেশ ঘোরার স্বীকৃতিস্বরূপ গাম্বিয়া সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন ‘ফ্ল্যাগ গার্ল’ (পতাকাকন্যা) উপাধি। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম দুর্দান্ত এ নারী পরিব্রাজকের জন্ম ১৯৭৯ সালের ১২ ডিসেম্বর উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার হামছাদী ইউনিয়নের গঙ্গাপুর গ্রামে। ব্যবসায়ী বাবা মোহাম্মদ আমিন ২০১০ সালে পৃথিবী ছেড়ে গেছেন। মা তাহেরা আমিন। ৩ ভাই এবং ৫ বোনের মধ্যে নাজমুন নাহার সবার ছোট।

তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের পর কিছু দিন সাংবাদিকতা করেন। পরে ২০০৬ সালে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য যান সুইডেনে। সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এশিয়ান স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি। মা তাহেরা আমিনকে নিয়ে নাজমুন ঘুরেছেন পৃথিবীর ১৪টি দেশে। মায়ের সঙ্গে করেছেন সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বত জয়!

ভ্রমণ শুরু হয় কিভাবে এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে নাজমুন নাহার জনকন্ঠকে বলেন, ছোট বেলায় বাবার প্রেরণায় বইপড়া শুরু। সব ধরনের বই পড়তেন। তবে ভ্রমণবিষয়ক বইয়ে ঝোঁক একটু বেশিই। তা পাঠ্যবইয়ের ভ্রমণকাহিনি হোক কিংবা পত্রিকায় প্রকাশিত কোনো ভ্রমণ কাহিনী হোক। সেই থেকেই ভ্রমনের নেশা পেয়ে যায় তাকে। তিনি আরো জানান ২০০০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় বাংলাদেশ গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য হিসেবে সুযোগ পান আন্তর্জাতিক অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশ গ্রহনের। সে সময় তিনি ভারতের ভুপালের পাঁচমারিতে যান। এটিই তাঁর জীবনের প্রথম বিদেশ ভ্রমন বলে জানান তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় ১২৫ দেশ ভ্রমন শেষ হল। ভ্রমনের খরচ কিভাবে যুগিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্কুল জীবন থেকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হয়ে কাজ করেছেন। ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের বিভিন্ন জায়গা। সুইডওয়াচসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় খন্ডকালীন চাকরি করেছেন। এগুলোই তার ভ্রমণ খরচের উৎস।

ভবিষ্যতের স্বপ্ন সর্ম্পকে নাজমুন নাহার বলেন, ‘ইনসপিরেশন গ্লোবাল ফাউন্ডেশন’ নামে একটি উদ্যোগ শুরু করতে যাচ্ছেন তিনি । এর মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন স্কুল ও অনাথ আশ্রমে যাবেন। বর্ণনা করবেন নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। তিনি জানান, ‘অসহায় শিশুদের মানুষ খাবার দেয়, নতুন জামা দেয়। কিন্তু আমি তাদের স্বপ্ন দেখাতে চাই। পৃথিবী দেখার স্বপ্ন। নিজেকে বড় ভাবার স্বপ্ন। আমি ভ্রমণের সময় অনেক মানুষ পেয়েছি, যারা কষ্ট করে বড় হয়েছে। তাদের দৃষ্টান্ত আমি শিশুদের শোনাব।’ এ জন্য তিনি তথ্যচিত্র ও বানাবেন। তিনি চান এসব শিশুদের দেখালে তারা বাস্তব জ্ঞান পাবে।

 

উপরে