৪ দফা দাবিতে শাহবাগে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতীকী অনশন
কক্সবাজারের মহেশখালীতে যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী ও সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের ওপর নৃশংস হামলা-নির্যাতনের বিচারে চার দফা দাবিতে তিন ঘণ্টার প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
রোববার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এতে মুক্তিযোদ্ধা ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন বিচ্ছু জালাল বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারকে প্রাপ্য সম্মান দেওয়া রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া আমাদের কর্তব্য। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিনিয়ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের ওপর হামলা-নির্যাতন চলমান রয়েছে।
মঞ্চের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার বলেন, এ বছরে যুদ্ধাপরাধ আদালতের প্রায় ১০ জন বাদী ও সাক্ষীর ওপর হামলা হয়েছে। এছাড়াও এ বছর প্রায় ২০ জন মুক্তিযোদ্ধার ওপর হামলা ও নির্যাতন হয়েছে। দুজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। অধিকাংশ হামলা ও নির্যাতনের ঘটনার ক্ষেত্রে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নীরব ভূমিকা পালন করছে, যা কখনোই কাম্য নয়।
একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আবীর আহাদ বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও দলের নেতাদের প্রত্যক্ষ মদতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের ওপর হামলা-নির্যাতন, জমি দখলের মতো ঘটনা একের পর এক আমাদের দেখতে হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বিচার চাইতে গিয়ে অনেক সময় উল্টো হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ড. এএসএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যাকে দুর্বল করার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারকে প্রশাসন ও দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে সুকৌশলে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিনিয়ত মুক্তিযোদ্ধাদের কটাক্ষ করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করলে আজ হয়তো আমাদের এ ধরনের ঘটনাগুলো দেখতে হতো না।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, কক্সবাজারের মহেশখালী ছাড়াও সম্প্রতি দিনাজপুর সদর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মমিনুল ইসলামের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়ে তাকে রক্তাক্ত করেছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। এভাবে প্রতিনিয়ত দেশের কোথাও না কোথাও বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারদের ওপর হামলা-নির্যাতনের চিত্র দেখতে হচ্ছে, যা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির শাসনামলে কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।
সংগঠনটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মহেশখালী প্রশাসন তাদের দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এখনও মামলার আসামি মেয়র মকছুদসহ তার ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়নি। যা আইনের শাসন পরিপন্থি। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের ওপর হামলা-নির্যাতন বন্ধ করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন দ্রুত প্রণয়নেরও দাবি জানাচ্ছি।
চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-
১. যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী ও সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের ওপর নৃশংসভাবে হামলাকারী কক্সবাজার মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মকছুদকে দ্রুত বহিষ্কার ও গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
২. সারাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের ওপর হামলা-নির্যাতন বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৩. মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অনুপ্রবেশকারী স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ও তাদের বংশধরদের চিহ্নিত করে দল ও প্রশাসন থেকে দ্রুত বহিষ্কার করে এদের নাগরিকত্ব বাতিল করতে হবে।
৪. অবিলম্বে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর হয়রানি বন্ধ করে একটি স্বচ্ছ তালিকা প্রকাশ এবং স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদর ও আল শামসদের তালিকা দ্রুত প্রণয়ন কর হতে হবে।
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুনের সঞ্চালনায় অনশন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা জিকে বাবুল ও ভাস্কর শিল্পী রাশা প্রমুখ।